উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে পাওয়ার এক দিনের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের হত্যামামলার এই আসামিকে ফেরত পাঠাতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে নূর হোসেনকে কারাগার থেকে বের করা হয় বলে পশ্চিমবঙ্গের কারা ও পুলিশ কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইও একই খবর দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএসএফ সদস্যরা নূর হোসেনকে বেনাপোলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
বাংলাদেশে সরকারের ‘উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ’ পেয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরের দিকে সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রওনা হন বলে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে হত্যার পর পালিয়ে ভারতে গিয়ে ধরা পড়েন নূর হোসেন। পশ্চিমবঙ্গের দমদম কারাগারে রাখা হয় তাকে।
বাংলাদেশে হত্যামামলার এই আসামিকে ফেরত পাঠাতে গত মাসে পশ্চিমবঙ্গের আদালতের অনুমতি মেলার পর তাকে ফেরানোর আলোচনা চলছিল। এই আলোচনা আরও জোর পায় বুধবার আসামের বিদ্রোহী নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানোর পর।
উলফা নেতাকে ফেরত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, নূর হোসেনকেও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হবে।
নূর হোসেনকে কি রাতেই ফেরত আনা হচ্ছে- জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মহিদ উদ্দিন বলেন, “যেহেতু নূর হোসেন এখনও তাদের (ভারতের) কাছে আছে, আমরা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছি না।”
সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মামুনুর রশীদ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বিকালে বেনাপোলের দিকে রওনা হন। তিনি ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন বলে পুলিশ সুপার জানান।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ’ পাওয়ার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছেন তারা।
সাত খুনের মামলার অভিযোগপত্র ইতোমধ্যে আদালতে দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ। তাতে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও।
তার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে গত ১৬ অক্টোবর উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপন চক্রবর্তী আদেশ দেন।
ওই আদেশের পর পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কৌঁসুলিরা বলেছিলেন, আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে দিল্লিতে কেন্দ্র সরকারকে জানানো হবে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মিললে নূর হোসেনকে দেওয়া হবে বিএসএফের হাতে। বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।
দুই দেশের যোগাযোগের মাধ্যমে হস্তান্তরের তারিখ ও সীমান্ত ঠিক হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যাবেন। এরপর বিএসএফ নূর হোসেনকে বিজিবির হাতে তুলে দেবে এবং প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে এসে হাজির করা হবে আদালতে।
লাশের সামনে নজরুল ইসলামের স্বজনদের আহাজারি
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
প্রথমে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন।
এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।