প্রস্তাবিত প্রকল্পের এষ্টিমেট করা বেশ জটিল, কারন এখানে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। সঠিক পর্যালোচনা, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভাল প্রকৌশলী হওয়া যায়। প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন বিভাগ মুখ্য ভূমিকা রাখে। একজন ভাল এষ্টিমেটর এর এইগুলি সম্পর্কে জানতে হবে এবং সাবধান হতে হবে।
এষ্টিমেট চূড়ান্ত করার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে দেয়া হলোঃ
১) অনুরূপ প্রকল্প: একই ধরনের প্রকল্প থেকে ধরণ থেকে নিয়ে এসটিমেট করলে খুব ফলপ্রসূ হয়। অনুরূপ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
২) উপাদানের দাম: মালামলের ভরসাপুর্ণ দাম জানতে হবে । একই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে মালামালের পরিবহন খরচ কেমন হবে।
৩) মজুরি: মজুরি খরচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মালামালের স্থানীয় দাম জানতে হবে। একই সাথে জানতে হবে সরকার বা উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্ধারিত মূল্য।
৪) সাইট এর অবস্থা: সাইট এর অবস্থার উপর প্রকল্প ব্যয় নির্ভর করে। যেমন খারাপ মাটি, বেজ মাটি, আবর্জনা, সার্ভিস লাইন ইত্যাদি।
৫) মুদ্রাস্ফীতি: মুদ্রাস্ফীতি খুব বড় রকম প্রভাব রাখে। প্রকল্প সময় এবং মুদ্রাস্ফীতির হার এর সমন্বয়ে এসটিমেট করতে হবে।
৬) দরপত্রের সময়: দরপত্রের সময় একটি ভাল ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন মৌসুমে দরপত্রের কারণে প্রভাব বিভিন্ন রকম হয়।
৭) প্রকল্প সময়সূচি: সিড্যিউল এর উপর মূল্য বলভাবে নির্ভর করে। যেমন খুব কম সময়ে করতে হলে তুলনামূলক বেশি খরচ হবে। আবার সাধারণ সময় এর চেয়ে বেশি সময় লাগলেও খরচ বেড়ে যায়। কেননা এর সাথে মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মচারী খরচ বেড়ে যায়। প্রকল্প শুরুর বেশি পূর্বে দরপত্র করলেও দাম বাড়তে পারে (এতে করে কনট্রাকটর কারণ দেখিয়ে দাম বাড়বে)
৮) মানসম্মত প্লান এবং স্পেসিফিকেশন : বলভাবে তৈরি প্ল্যান এবং বিশদ বর্ণনা ছাড়া ভাল এসটিমেট করা অসম্ভব। এতে করে কনট্রাকটর দের বুঝতে অসুবিধা হয় এবং পরবর্তীতে ঝামেলা হয়। যার কারণে এসটিমেট ভাল হয় না।
৯) প্রকল্প প্রকৌশলীর সুনাম : যদি প্রকৌশলীর বা প্রতিষ্ঠানের খুব ভাল সুনাম থাকে তাহলেও প্রকল্প ব্যয় পার্থক্য হয়। কনট্রাকটর এয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকলেও কাজ করতে সুবিধা হয় এবং কংত্র্ক্টর কম দামে দরপত্র দেয়। উভয়ের মধ্যে ভাল সম্পর্ক থাকলেই অল্প সময়ে প্রকল্প সুন্দর ভাবে শেষ করা সম্ভব। যায় ব্যয় এর উপর প্রভাব ফেলে।
১০) অনুমোদিত এজেন্সি: যদি কোনও প্রতিষ্ঠান তহবিল প্রদান করে থাকে তখন খরচ কিছুটা বারে। কেননা এতে করে দলীলাদি বা কাগজপত্র বেশি করতে হয়। যা মোট খরচের উপর প্রভাব ফেলে।
১১) নিয়ন্ত্রণ সংস্থা: কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন নিতে হয়। তাই বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এখানেও অনেক খরচ হয়।
১২) বীমা প্রয়োজনীয়তা : যদি বিমার প্রয়োজন হয় তাহলেও এটি হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে।
১৩) প্রকল্পের আকার: প্রকল্পের আকার এবং জটিলতার উপর নির্ভর করে যে স্থানীয় কনট্রাকটর এটি করতে পর্বে কী পর্বে না। যার কারণে একটি বড় অংশ নির্ভর করে এর উপর।
১৪) কাজের স্থান: কাজের স্থানের উপর এও নির্ভর করে। এবং এর প্রভাব বড়। যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাল মজুর পাওয়া যায়না। আবার বেইসি খরচপূর্ণ এলাকাতে মজুর খরচ বা অন্য জিনিস এর দাম বেশি। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহন খরচ বেশি।
১৫) উপকারিতা যাচাই করানো: বড় বড় প্রকল্প করার সময় সাধারনত এর উপকারী যাচাই করে নিতে হয় কোনও নিয়োজিত সংস্থা কর্তৃক। তাই এটাও জেনে নিতে হবে এবং যদি এর প্রয়োজন হয় তাহলে এটি হিসাব করে এসটিমেট করতে হবে।
১৬) অনিশ্চয়তা: কিছু বিষয় থাকে যা অনেক সময় হিসাব থেকে বাদ পড়ে যায়। তাই নিরাপত্তার জন্য মোট খরচের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত হিসাব করা হয়।
১৭) অধিক তদন্ত: কিছু প্রকল্প সাইট এর অতিরিক্ত তদন্তের প্রয়োজন পরথে পারে। যেমন পরিবহন ব্যবস্থা, রাতে কাজ করার অবস্থা, চাদবাজি ইত্যাদি।
১৮) রায়: সর্বশেষ এসটিমেট করা হয় বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা বিচারে। অনেক সময় অভিজ্ঞতা থেকে মোট এসটিমেট এর উপর কিছু অতিরিক্ত ধরে এসটিমেট করা হয়।